সীমান্তের খবর ডেস্ক : বাংলাদেশের কাস্টমস ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা হলো। এখন থেকে দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে গণরাজস্ব পরিশোধ ‘এ-চালান’ (Automated Challan) পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যাবে। আগামী ৭ জুলাই ২০২৫ থেকে এটি সারাদেশে একযোগে কার্যকর হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতোমধ্যেই এই উদ্যোগের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং দেশের বৃহত্তম কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত ৩ জুলাই থেকে এ-পদ্ধতি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে।
এর ফলে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টগণ এখন ঘরে বসে অনলাইন ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে শুল্ককর পরিশোধ করতে পারবেন। শুল্ক জমা দেওয়ার পরপরই সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে তাৎক্ষণিকভাবে জমা হবে, যা আগে আরটি-জিএস বা চেক ক্লিয়ারিংয়ের প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হতে একাধিক দিন সময় লাগত।
এনবিআর সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগের তৈরি iBAS++ (ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড একাউন্টিং সিস্টেম) এবং এনবিআরের কাস্টমস ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার ASYCUDA World এর মধ্যে সফলভাবে ইন্টিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা শুল্ক পরিশোধের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় চালান সৃষ্টি করতে পারবেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারিত পরিমাণ রাজস্ব জমা দিতে পারবেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। আমদানীকারক, রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ১ ও ২ জুলাই প্রশিক্ষণ শেষে ৩ জুলাই থেকে অনলাইন শুল্ক পরিশোধ কার্যক্রম শুরু হয়। ঐ দিনই ৭৫টি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে ১৩ কোটি টাকার বেশি শুল্ককর অ্যাটোমেটেড চালান ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়।
চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল কমলাপুর ICD কাস্টম হাউসে পরীক্ষামূলকভাবে ‘এ-চালান’ পদ্ধতি চালু করা হয়। এরপর পানগাঁও কাস্টম হাউস এবং সর্বশেষ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এই পদ্ধতির সফল বাস্তবায়ন শেষে এখন দেশব্যাপী এই ডিজিটাল সুবিধা চলতি ৭ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে।
এনবিআর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের ৬১টি ব্যাংকের প্রায় ১১,৭০০ শাখা থেকে গ্রাহকরা রিয়েল-টাইম ভিত্তিতে একাউন্ট ডেবিট অথবা চেক ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি ট্রেজারিতে শুল্ক জমা দিতে পারছেন। এছাড়া, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড এবং রকেট, বিকাশ, নগদ, উপায়, এমক্যাশ, ট্রাস্ট-পে ইত্যাদি আধুনিক ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সেবা ব্যবহার করেও শুল্ক পরিশোধ সম্ভব। পরিশোধকৃত শুল্কের রশিদ নম্বর দিয়ে বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাসের কাজ সম্পন্ন করা যাবে।
নতুন ‘এ-চালান’ ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে আসছে একাধিক পরিবর্তন ও সুবিধা:
(১) তাৎক্ষণিক ট্রেজারি জমা: শুল্ক পরিশোধের সাথে সাথেই অর্থ কোষাগারে জমা হবে।
(২) সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় গতি: কোষাগারে তাৎক্ষণিক জমার কারণে সরকার এই অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যয় করতে পারবে।
(৩) সহজ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া: অনলাইন চালান তৈরি ও রিসিপ্ট সংগ্রহ সহজ হবে।
(৪) দ্রুত পণ্য খালাস: বিলম্ব ছাড়াই পণ্য খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।
(৫) ব্যাংকে না গিয়েও পরিশোধ: ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ সম্ভব।
এনবিআর আরও জানায়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে করদাতারা দিনে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে অনলাইনেই শুল্ক জমা দিতে পারবেন, যার ফলে অফিসে গিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরার ঝামেলা বা বিলম্বের আর কোনো আশঙ্কা থাকবে না। এটি সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই উদ্যোগ দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহারে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।