বেনাপোল:
বেনাপোল পৌরসভার সাবেক জনপ্রিয় কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট সমাজসেবক আমিরুল ইসলাম (৬৫) আর আমাদের মাঝে নেই। মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) রাত ১২টার দিকে তিনি নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
মরহুম আমিরুল ইসলাম বেনাপোল পৌরসভার সাবেক জনপ্রিয় কাউন্সিলর এবং ছিলেন কাগজপুকুর এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তার পিতার নাম মৃত ইমান আলী মন্ডল। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্রসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তাঁর কর্মময় জীবন ছিল জনসেবা, সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কাজের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন বেনাপোল পৌরসভায়। রাজনৈতিকভাবে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় ও অনুগত সহযোগী ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বাদ জোহর কাগজপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কাগজপুকুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে পারিবারিক মর্যাদায় দাফন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, আমিরুল ইসলাম ছিলেন বিনয়ী, সদালাপী ও পরোপকারী। সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি কখনও পেছপা হননি।
তাঁর সহকর্মীরা বলেন, জনপ্রতিনিধি থাকাকালীন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছেন এলাকার উন্নয়নে। কথা নয়, কাজেই ছিল তার বিশ্বাস।
শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন বলেন: “আমরা একজন প্রকৃত জনদরদী মানুষকে হারালাম। তিনি ছিলেন উদার মানসিকতা ও শুভবোধসম্পন্ন একজন ব্যক্তি। শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র।”
মরহুম আমিরুল ইসলাম তাঁর জীবদ্দশায় ছিলেন কাগজপুকুর জামে মসজিদের দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির একজন প্রতিষ্ঠাতা নেতা, এবং স্থানীয় বহু স্কুল-মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। সামাজিক ও ধর্মীয় বহু কর্মকাণ্ডে তাঁর নেতৃত্ব ও সহযোগিতা ছিল প্রশংসনীয়।
তার মৃত্যুতে বেনাপোল এবং আশেপাশের এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বেনাপোল পৌরসভাসহ স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকবার্তা প্রকাশ করছেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান তার জানাজার পূর্বে বলেন:
“আমিরুল ইসলাম একজন নিঃস্বার্থ সমাজকর্মী ছিলেন। সৎ-নিষ্ঠা, মানবিকতা ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এই মানুষটিকে আমরা চিরকাল মনে রাখব।”
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও যশোর জেলার নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন: “একজন ভালো মনের মানুষ আমাদের মাঝ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। তিনি শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, একটি সমাজের শূন্যতা তৈরি করে গেছেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপণ করেন।”
আমিরুল ইসলাম আর নেই, কিন্তু তার কর্মগাথা, হাসিমাখা মুখ ও মানুষের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা বেঁচে থাকবে বেনাপোলবাসীর হৃদয়ে। তাঁর মতো সৎ, দায়িত্ববান ও মননশীল মানুষ সমাজে বিরল। তাঁর শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়’ বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী।