সীমান্তের খবর ডেস্ক :: ২২ জুন ২০২৫: ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুরুথ সোশ্যালে এই হামলার দায় স্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, হামলা “সফলভাবে” সম্পন্ন হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকেও এই তিন স্থানে হামলার ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পোস্টে জানান, ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, হামলা শেষে সমস্ত মার্কিন বিমান ইরানের আকাশসীমার বাইরে নিরাপদে অবস্থান করছে। পরবর্তী আরেকটি পোস্টে তিনি সংক্ষেপে লেখেন, “ফোর্দো ইজ গন” (ফোর্দো শেষ)।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাতে কোম প্রদেশের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের মুখপাত্র মোর্তেজা হায়দারি জানান, “ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রের একটি অংশ বিমান হামলার শিকার হয়েছে।”
ইসফাহানের নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-গভর্নর আকবর সালেহি বলেন, “নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আমরা ইসফাহান ও নাতাঞ্জের পারমাণবিক স্থাপনার কাছে হামলা দেখেছি।”
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ডেপুটি পলিটিক্যাল ডিরেক্টর হাসান আবেদিনি দাবি করেন, হামলার আগেই ইরান “কিছুক্ষণ আগে” ঐ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো খালি করে ফেলেছে এবং পারমাণবিক কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তার মতে, “ট্রাম্প যা বলেছেন তা যদি সত্য হয়ও, ইরান বড় কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি।”
মার্কিন কর্মকর্তা ও রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হামলায় অত্যাধুনিক B-2 স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহৃত হয়েছে। গত কয়েকদিন আগেই এই বিমানগুলো গুয়ামে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যা ইরানের দিকে সম্ভাব্য অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের একজন ভাষ্যকার সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “এই অঞ্চলের প্রতিটি আমেরিকান নাগরিক বা সামরিক স্থাপনা এখন একটি বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”
সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “তিনি সঠিক কাজটি করেছেন… (ইরানের) সরকার এটারই যোগ্য।” সিনেটর রজার উইকারও হামলাকে “সঠিক” আখ্যা দেন।
সমালোচনায় কেন্টাকির রিপাবলিকান সিনেটর থমাস ম্যাসি হামলাকে “অসাংবিধানিক” বলে উল্লেখ করেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি সারা জ্যাকবস এটিকে “একটি ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি, যা যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি অন্তহীন এবং মারাত্মক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ” বলে মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ট্রাম্পের পোস্টটি শেয়ার করেছেন, তবে হামলা সম্পর্কে এখনও সরাসরি মন্তব্য করেননি।
এই হামলার সূত্রপাত গত ১৩ জুন ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় এক “নজিরবিহীন” হামলার মাধ্যমে (যার কোডনাম ছিল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’)। ইরান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছেন।
ইরান ইসরায়েলের ওপর পাল্টা বিমান হামলা চালায়, যাতে ইসরায়েলের মতে, কয়েক ডজন নাগরিক প্রাণ হারান।
ইরানের এই হামলাকে ১৯৮০-১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর তাদের ভূখণ্ডের বাইরে চালানো সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি নিউজের প্রতিবেদন অবলম্বনে।