ফিরোজ আহমেদ : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানকে অপসারণের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে চলমান “কমপ্লিট শাটডাউন” এর দ্বিতীয় দিনে বেনাপোল স্থলবন্দরে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
রবিবার সকাল থেকে এ বন্দর দিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো “লাগাতার কমপ্লিট শার্টডাউন-এ” আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। যদিও দু’দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াছ হোসেন মুন্সি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেনাপোল বন্দর খোলা থাকলেও, কাস্টমস হাউসে কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতি দেখা যায়নি। এতে শুল্কায়নসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিদিন প্রায় ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দর-নির্ভর পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাও।
“ভারত-বাংলাদেশ” দুই দেশের সীমান্তবর্তী বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যবোঝাই শত শত ট্রাক আটকে আছে। বাংলাদেশ অভিমুখী এসব ট্রাকের অধিকাংশেই রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। ফলে রফতানিমুখী শিল্পখাতেও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে এই আন্দোলন কতদিন চলবে- সে বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে চলমান অসন্তোষের প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। তারা বলেন, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। এ অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি শুধু বন্দরের উপরই নয়, সামগ্রিক জাতীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, “রাজস্ব বোর্ডের অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় গত দুই দিন ধরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সংক্রান্ত কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা যাচ্ছে না। সার্ভার অচল থাকায় দুই দেশের মধ্যে কার্যকর বাণিজ্য কার্যক্রম পুরোপুরি থমকে গেছে।” তারপরে আবার এনবিআর কর্মকর্তাদের কমপ্লিট শার্টডাউন এর কারণে বেনাপোল বন্দরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, “কয়েকদিন আগেই সার্ভার জটিলতার কারণে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছিল। এখন আবার বাংলাদেশে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে আমরা বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারছি না। পেট্রাপোল বন্দরে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, যারা বেনাপোল বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে।”
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, “কাস্টমসের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর কারণে আমদানিকারকরা সময়মতো তাদের পণ্য খালাস নিতে পারছেন না। ফলে প্রতিদিন তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত গুদাম ভাড়া বা ডেমারেজ। অনেক দামী ও স্পর্শকাতর পণ্য গুদামে পড়ে থেকে মান হারানোর ঝুঁকিতেও রয়েছে।” একইসাথে “একদিকে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকারেরও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় ব্যাহত হচ্ছে।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, “কাস্টমস কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের কারণে শনিবার সকাল থেকে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণরুপে বন্ধ রয়েছে। এতে ভারতের পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে শত শত ট্রাক আটকে গেছে।”