সীমান্তের খবর ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের মেডচল জেলায় একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ জনে পৌঁছেছে। এখনো ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৩০ জুন) সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের একটি ইউনিটে কর্মীরা কাজ করছিলেন, এমন সময় হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়লে পুরো ভবনটি ধসে পড়ে। সে সময় ভবনের ভেতরে প্রায় ৬০ শ্রমিক ছিলেন।
জেলার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা পরিতোষ পঙ্কজ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও পর্যন্ত ৩১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরও তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন, যাঁদের অনেকেই অগ্নিদগ্ধ এবং বিষাক্ত ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শ্রমিকরা স্প্রে ড্রায়ার চালানোর সময় অতিরিক্ত চাপে বিস্ফোরণ ঘটে। একটি উদ্ধার দলের সিনিয়র সদস্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জানান, “কারখানাটি যেখানে মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ নামক একটি রাসায়নিক উৎপাদন করতো, যা খুবই দাহ্য। এই সূক্ষ্ম ধুলো ও রাসায়নিক কণাগুলো বিস্ফোরণ ও আগুন ছড়াতে সহায়ক ছিল।”
কারখানায় কাজ করা অধিকাংশ শ্রমিক ছিলেন অভিবাসী, যাঁরা ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য থেকে এসেছেন।
সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কারখানার যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে সাময়িকভাবে ৯০ দিনের জন্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা হচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছে, হতাহতদের সংখ্যা ও তাদের অবস্থা জানার চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় এক ভুক্তভোগী শ্রমিকের পরিবারের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ এনে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এখনো ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ চলছে। তেলেঙ্গানার ফায়ার সার্ভিস বিভাগের পরিচালক জিভি নারায়ণ রাও রয়টার্সকে জানান, “উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না আরও কেউ ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছেন কিনা।” যেসব লাশের সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়ই এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার নিহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক শোকবার্তায় নিহতদের পরিবারের জন্য ২ লাখ রুপি এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি করে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন (তথ্যছবি: বিবিসি বাংলা)।
ভারতের এখন পর্যন্ত এটি চলতি বছরের অন্যতম ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।