সীমান্তের খবর ডেস্ক : ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে পরিচালিত বিতর্কিত ত্রাণকেন্দ্রগুলো থেকে খাদ্য সংগ্রহের সময় কমপক্ষে ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪ হাজার ৮৯১ জন।
এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে শনিবার (৫ জুলাই) গাজার কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতিতে। মন্ত্রণালয় জানায়, ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ (GHF) পরিচালিত বিতরণকেন্দ্রগুলোতে, যা মে মাসের শেষ দিকে কার্যক্রম শুরু করে, খাদ্যের জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ এবং সহিংসতা চালানো হয়।
”ত্রাণকেন্দ্রে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি”
আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, নিহত ও আহতদের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে, কারণ ”বহু হতাহত এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে, বা কোনো হাসপাতালেই পৌঁছায়নি।”
তিনি বলেন, “মানুষ যখন তীব্র খাদ্য সংকটে এক মুঠো খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে, তখনই তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।” ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা এমনকি documenting করাও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।
মার্কিন সংস্থার ভেতর থেকেই অভিযোগ”
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ত কিছু ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন যে, GHF-এর নিরাপত্তা কর্মীরা অনেক সময় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ, স্টান গ্রেনেড ও ধাওয়া চালায়।
প্রতিবেদনে এক ঠিকাদার জানান, “তাদের (GHF কর্মীদের) আচরণ সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত। যেন তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আছেন।”
GHF-এর পাল্টা বিবৃতি: সব ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’
তবে GHF সব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “আমাদের প্রতিটি বিতরণ কার্যক্রম আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। জনগণের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
“যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত, সমালোচনা তীব্র”
GHF নিয়ে তীব্র আন্তর্জাতিক বিতর্কের মাঝেও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটির পাশে রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, “GHF-ই একমাত্র সংস্থা, যারা বর্তমানে গাজার ভেতরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম হয়েছে। সেই কারণেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহযোগিতা করছে।”
জুনের শেষে GHF-কে সরাসরি ৩০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
“মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র ক্ষোভ”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা GHF-এর কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তারা একে আখ্যায়িত করেছে “অমানবিক ও সামরিকীকরণ-ভিত্তিক বিতরণ ব্যবস্থা” হিসেবে।
তাদের ভাষায়, “GHF মূলত একটি রাজনৈতিক মুখোশ— যা মানবিক সহায়তার নামে ইসরায়েলি দমননীতি চালিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।”
“ত্রাণ নয়, আতঙ্ক ভাবিয়ে তুলছে গাজাবাসীকে”
একসময় আশার প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও, GHF-এর বিতরণকেন্দ্র এখন অনেক গাজাবাসীর কাছেই আতঙ্কের নাম।
খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে জর্জরিত গাজায়, এই কেন্দ্রগুলো ছিল সহায়তা পাওয়ার শেষ বাহন। কিন্তু গুলির শব্দ, রক্তাক্ত লাশ আর মায়ের আর্তনাদ যেন প্রশ্ন তোলে— আসলে কার নামে চলছে এই “ত্রাণ” কর্মসূচি?