সীমান্তের খবর ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার সীমান্তে সামরিক সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে থাইল্যান্ডের তিনটি সীমান্তবর্তী প্রদেশের ১১ জন বেসামরিক নাগরিক এবং একজন সেনা সদস্য রয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হলেও কাম্বোডিয়ার হতাহতের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য এখনো প্রকাশ পায়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। থাইল্যান্ডের দাবি, কাম্বোডিয়ার সেনারা তাদের সীমান্তের কাছে নজরদারি চালাতে ড্রোন ব্যবহার শুরু করে। এরপর কাম্বোডিয়ার সেনারা রকেটচালিত গ্রেনেড ও ভারী অস্ত্র নিয়ে সীমান্তের কাছে অবস্থান নেয়। থাই সেনারা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কথা বলার চেষ্টা করলেও সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কাম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে গুলি ছোড়া হয়। পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয় থাই বাহিনী।
অন্যদিকে কাম্বোডিয়ার দাবি, সংঘর্ষ শুরু করে থাইল্যান্ড। তারা জানায়, থাই সেনারা ভোরে সীমান্তের কাছে একটি প্রাচীন খেমার-হিন্দু মন্দিরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করতে গেলে তাদের সৈন্যরা বাধা দেয়। কাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, থাই সেনারা সকাল ৮টার দিকে প্রথমে গুলি চালায়, এরপর আত্মরক্ষার্থে তাদের সৈন্যরা পাল্টা গুলি ছোড়ে।
থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, কাম্বোডিয়ার রকেট হামলায় সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকা হাসপাতাল, পেট্রোল স্টেশন, ঘরবাড়ি ও সরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাম্বোডিয়ার দাবি, থাই সেনারা বিমান থেকে কাম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, গোলাগুলির শব্দে সীমান্ত এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। থাইল্যান্ড ইতোমধ্যেই ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। কাম্বোডিয়াও সীমান্তের কাছে থাকা জনগণকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলের পর সীমান্ত নির্ধারিত হলেও বহু এলাকা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়ে যায়। ২০০৮ সালে কাম্বোডিয়া সীমান্তের কাছে অবস্থিত একাদশ শতকের একটি হিন্দু মন্দির ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে চাইলে থাইল্যান্ড তীব্র আপত্তি জানায়। এরপর থেকে প্রায়শই সীমান্তে সংঘর্ষ দেখা দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। গত মে মাসে সংঘর্ষে কাম্বোডিয়ার এক সেনার মৃত্যুর পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। এরপর কাম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি বন্ধ করে এবং বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা নেয়া স্থগিত করে। থাইল্যান্ডও সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ায়।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেছেন, সীমান্ত সমস্যাটি স্পর্শকাতর এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হবে। কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জানিয়েছেন, তারাও শান্তিপূর্ণ সমাধান চান, তবে “সশস্ত্র আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জবাব” দিতে বাধ্য হবেন।
যদিও তীব্র গোলাগুলি আপাতত কিছুটা কমে এসেছে, তবুও পরিস্থিতি যে কোনো সময় আবারও অস্থির হতে পারে। থাইল্যান্ডের জোট সরকার ও কাম্বোডিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সীমান্ত ইস্যুটি জটিল আকার নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে দ্রুত কোনো সমাধান পাওয়া কঠিন হবে। “তথ্যচিত্র: বিবিসি”-