সীমান্তের খবর ডেস্ক : এবারের মৌসুমে ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০–২৬০০ টাকায়, আর এক কেজির বেশি ওজনের বড় ইলিশ কেজিপ্রতি ৩০০০–৩৫০০ টাকায়। ছোট আকারের ইলিশও কেজিতে প্রায় ২০০০ টাকার আশেপাশে।
চাঁদপুর, বরিশাল ও খুলনাসহ বিভিন্ন ঘাটেও একই অবস্থা। চাঁদপুর বনিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার বলেন,
“এখন এক কেজির ইলিশ ঘাটেই ২৫০০ টাকার কাছাকাছি। দেড় কেজির মাছ তিন হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।”
কেন দাম বেশি?
গবেষক ও ব্যবসায়ীদের মতে, এবছর সরবরাহ কম হওয়াই মূল কারণ। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় জেলেরা স্বাভাবিকভাবে মাছ ধরতে পারছেন না। এছাড়া নদীতে নাব্যতা হ্রাস, ডুবোচর তৈরি, দূষণ, জাটকা ও মা ইলিশ ধরা—এসব কারণে ইলিশের বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন,
“এর মানে এই নয় যে ইলিশ নেই, তবে আহরণে বাধা তৈরি হচ্ছে।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২–২৩ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ৫.২৯ লাখ মেট্রিক টনে। অথচ বাজারে চাহিদা কমেনি, বরং বেড়েছে।
দাম কি কমবে?
গবেষকরা বলছেন, সেপ্টেম্বর–অক্টোবরই ইলিশের মূল মৌসুম। বিশেষ করে পূর্ণিমার সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তে পারে। তখন দুই-তিন দিনের মধ্যেই বাজারে প্রভাব পড়বে এবং দাম কেজিপ্রতি ৪০০–৫০০ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক ময়েদুজ্জামান আশা প্রকাশ করে বলেন,
“ভালো ক্যাচ হলে এক কেজির ইলিশ ঘাটে ১৮০০ টাকায় নামতে পারে।”
দীর্ঘমেয়াদি সমাধান
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইলিশের উৎপাদন টেকসই রাখতে হলে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ এবং অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে।
জাতীয় মাছ হিসেবে স্বীকৃত ইলিশ যদি এভাবেই সংকটে পড়ে, তবে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের জন্য এটি আরও নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা।